বিপন্ন শকুন রক্ষায় নিষিদ্ধ হলো কিটোপ্রোফেন
- Posted on 13-02-2021 11:42:13
- Animal Resources

ঢাকা অফিস ॥
প্রকৃতির ঝাড়ূদার হিসেবে স্বীকৃত, অথচ মহাবিপন্ন শকুন পাখি রক্ষায় নিষিদ্ধ হচ্ছে গবাদি পশুর চিকিৎসায় ব্যবহূত ওষুধ কিটোপ্রোফেন। বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য তোলা হলে তা অনুমতি নয়।
স্বাধীনতার আগেও দেশে শকুনের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০ হাজার। গত দুই দশকে তা আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে। বর্তমানে দেশে এর সংখ্যা মাত্র ২৬০। এটি এখন দুর্লভ পাখিতে পরিণত হয়েছে। শকুন কমে আসায় গবাদি পশুর মৃতদেহ থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ ও প্রাণী।
মহাবিপন্ন এই পাখিকে বাঁচাতে এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর সরকার পশুচিকিৎসায় ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহূত 'ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম' নিষিদ্ধ করে। তখন পশুচিকিৎসায় কিটোপ্রোফেন ওষুধের ব্যবহার ও উৎপাদন শুরু হয়। তবে কিটোপ্রোফেনও শকুনের জন্য সমান ক্ষতিকারক, যা বিভিন্ন দেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত।
২০১৭ সালে শকুনের জন্য ঘোষিত এ দেশের নিরাপদ দুটি এলাকায় কিটোপ্রোফেনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, বাইরের অঞ্চল থেকে এ ওষুধ শকুন-নিরাপদ এলাকায় আসছে। এতে নিরাপদ এলাকায় কিটোপ্রোফেন নিষিদ্ধ হলেও খুব বেশি ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমানে পশুচিকিৎসায় ক্ষতিকর এ ধরনের ওষুধের বদলে সারা বিশ্বেই মেলোক্সক্যাম জাতীয় ওষুধ বহুল ব্যবহূত হচ্ছে। বাংলাদেশেও ১৩টি কোম্পানি এ ওষুধ উৎপাদন করছে। বেশ কয়েকটি কোম্পানি ওষুধটি উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে কিটোপ্রোফেন নিষিদ্ধ হলো।
শকুন রক্ষায় এশিয়ায় গঠিত রিজিওনাল স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এবং ২০১৭ ও ২০১৯ সালে আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দুটি সভা করে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ নিষিদ্ধের বাধ্যবাধকতা দেখা দেয়। এ ছাড়া সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) অনুযায়ী শকুন রক্ষায় সারাদেশ থেকে কিটোপ্রোফেন নিষিদ্ধ প্রয়োজন। এমন প্রেক্ষাপটে কিটোপ্রোফেন নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা মন্ত্রিসভায় যাচ্ছে।
দুই দশক আগেও গবাদি পশু মরতে না মরতেই শকুনের দল এসে মৃতদেহ স্বল্প সময়ে খেয়ে প্রকৃতিকে পরিস্কার ও রোগমুক্ত রাখত। শকুনের পরিপাকতন্ত্র অ্যানথ্রাক্সসহ সব ধরনের প্যাথোজেন ধ্বংস করতে সক্ষম। তাই অ্যানথ্রাক্সসহ অন্যান্য জুনোটিক রোগগুলোর (প্রাণী থেকে মানবদেহে রোগ-জীবাণু ছড়ায় এমন) বিস্তার রোধে শকুনের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু গত কয়েক দশকে দক্ষিণ এশিয়া থেকে ৯৯ শতাংশেরও বেশি শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে একসময় তিন প্রজাতির শকুন স্থায়ীভাবে বসবাস করত। বর্তমানে শুধু বাংলা শকুন ও মরুঠুটি শকুন আবাসিক শকুন হিসেবে টিকে আছে। বাংলা শকুন এ দেশের একটি প্রতীকী পাখিও বটে, কারণ এর বৈজ্ঞানিক নামে বাংলা শব্দটি সংযুক্ত রয়েছে।